December 23, 2024, 8:06 am
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
অবশেষে দেশে কারিগরি শিক্ষায় আরেকটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। উঠে কারিগরির অধীনে কলেজ স্থাপনে নিজস্ব জমি সহ ভবন থাকার বাধ্যবাধকতা। আর এ অর্জনের পেছনে কাজ করেছেন
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর। তিনি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে রাষ্ট্রপতি মনোনিত সদস্য।
গোড়ার কথা হলো ২০১৯ সালে প্রথমবারের মত বোর্ড মেম্বার হয়ে প্রথমেই উপলব্ধি করেছিলেন কারিগরি শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হচ্ছে প্রতিষ্ঠান স্থাপন নীতিমালার কয়েকটি ধারায় অবাস্তব কিছু শর্তের জন্য।
সরকার কারিগরি শিক্ষায় যে পরিমাণ এনরোলমেন্ট আশা করছে সেটা পূরণ করার জন্য দেশে অনেক নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার প্রয়োজন কিন্তু নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রচলিত নীতিমালায় কয়েকটি বিষয়ে অবাস্তব কিছু বিধিনিষেধের কারণে নতুন উদ্যোক্তারা নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আগ্রহ হারাচ্ছিলেন।বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী একজন উদ্যোক্তাকে জেলা শহরে একটি কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীভুক্ত কলেজ স্থাপন করতে গেলে জমিসহ অবকাঠামো বাবদ ব্যয় করতে হত কোটি টাকার উপরে।যার কারণে কোন উদ্যোক্তা আগ্রহ দেখাতেন না এই খাতে বিনিয়োগ করার জন্য।বিগত কয়েকবছরে নতুন প্রতিষ্ঠানও অনুমোদন হয়েছিল হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি।
বোর্ড মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর সুফি ফারুক বিদ্যমান নীতিমালা পরিবর্তনের জন্য প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেন।সরকারের ভিশন ও মিশন বাস্তবায়নের জন্য উক্ত নীতিমালা যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনুরোধ করেছিলেন।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত নীতিমালা যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করার জন্য শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে উক্ত নীতিমালা সংশোধনের জন্য বোর্ডের মতামত চেয়ে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়।চিঠি পেয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান একটা ওয়ার্ক শপ আয়োজন করে, যেখানে সারাদেশ থেকে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধি ও বেসরকারি মালিক সংগঠনের প্রতিনিধি কে আমন্ত্রণ জানানো হয়।উক্ত ওয়ার্কশপে বিএনপি জামাত সরকারের আমলে অনুমোদন পাওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ্য একচেটিয়া এই খাতে ব্যবসা করে যাওয়ার জন্য উক্ত নীতিমালা সংশোধন এর তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং বিদ্যমান নীতিমালা বহাল রাখার পক্ষ্যে জোড় দাবি জানান।ফলে আবারও নীতিমালা অসংশোধিত থাকার সিদ্ধান্ত হয়।
বিষয়টি জানার পর সুফি ফারুক পরবর্তী বোর্ড সভায় উক্ত বিষয়ের তীব্র বিরোধিতা ও সংশোধিনীর পক্ষ্যে তার যৌক্তিকতা দেখান।তিনি বলেন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বৃহৎ প্রতিষ্ঠান অনুমোদন নিতে নিজস্ব জমি ও অবকাঠামোর প্রয়োজন নেই সেখানে কেন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনে এই বিধিনিষেধ থাকবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে টিকে থাকতে হলে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষালাভ কতটা জরুরি।সরকার কারিগরিতে যে পরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তি আশা করছে দেশের বিদ্যমান প্রতিষ্ঠান দিয়ে পূরণ করা তা অসম্ভব।আর সরকারের একার পক্ষ্যেও এত প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা সম্ভব নয়।সেজন্য প্রয়োজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠা।আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান করতে কোন উদ্যোক্তাই আগ্রহ দেখাবে না প্রচলিত নীতিমালা বহাল থাকলে।সুফি ফারুকের যৌক্তিক দাবি ও তথ্যবহুল বক্তব্যের কারণেই উক্ত বোর্ড সভায় উপস্থিত অন্যন্য বোর্ড সদস্যরাও প্রচলিত নীতিমালা সংশোধনীর পক্ষ্যে মত দেন।
যারই ধারাবাহিকতায় উচ্চতর পর্যায়ে পরবর্তী সপ্তাহে একটা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় উক্ত নীতিমালা সংশোধনী হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
তারপর বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উক্ত সংশোধনী নীতিমালা অনুমোদন জন্য শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে প্রেরণ করা হয়।
চলতি সপ্তাহে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ পূর্বের নীতিমালা বাতিল করে নতুন নীতিমালার অনুমোদন দেয়।
Leave a Reply